মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

অতিরিক্ত গরমে চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা

মো. নাসির খান (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি ।।

সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। আর এই দাবদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের ধানচাষিরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে পারছেন না পাকা ধান কাটতে। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতের বেলাকে বেছে নিয়েছেন অনেক চাষি।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ১৫১ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় ৩ হাজার ৮২১ হেক্টর ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় আবাদ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে।

চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। তবে একটানা চলা প্রচণ্ড দাবদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষিবিভাগ।

সরেজমিনে বেশ কয়েকটি ধানের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে দুলছে সোনালী ধান। অধিকাংশ জমির ধান এখন পেকে গিয়েছে। দিনের বেলা প্রখর রোদের তাপ থাকায় রাতের বেলা চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা।

চর কাশাভোগ এলাকার চাষি মিজান শিকদার। এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে করেছেন বোরো ধানের চাষ। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটা খুশি এ চাষি। তবে বিপাকে পড়েছেন ধান পাকার পর। প্রচণ্ড দাবদাহে দিনের বেলা ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না অনেক শ্রমিক। পরে সিদ্ধান্ত নেন রাতেই কাটা হবে জমির ধান। যেই ভাবা সেই কাজ, ৪ জন কৃষাণ নিয়ে চাঁদের আলোয় ধান কাটা শুরু করেন। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এ ধান কাটা। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে তার।

মিজান শিকদার বলেন, আমরা সব সময় দিনের বেলাতেই ধান কাটি। এ বছর প্রচণ্ড তাপের কারণে দিনের বেলা কৃষাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে আমি বেশ বিপাকে পড়ে যাই। পরে আমার এক ভাই রাতের বেলা ধান কাটার উপদেশ দিলো। কৃষাণদের বলতেই তারা রাজি হয়ে গেলো। যখন দিনের গরম কমে যায় তখন আমরা ধান কাটার কাজ শুরু করি।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে আমাদের কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com